গত ৭ মার্চ চতুর্থ সন্তানের জন্ম দিয়েছেন৷ সেই থেকে পেটভরা খাবার জোটেনি নীতুর৷ ৩২ বছরের মেয়েটি এতটাই দুর্বল যে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পর্যন্ত পারছেন না৷ পা টলে যাচ্ছে৷ পেটের জ্বাল সহ্য করতে করতে কাহিল৷
স্বামী পেশায় চর্মকার৷ গত ৩ সপ্তাহ হল সব রোজগার বন্ধ হয়ে গিয়েছে৷ এমনকী সন্তানের জন্মের পরে প্রয়োজনীয় ওষুধও জুটছে না৷ পয়সা কই!
বিছানায় শুয়ে জড়ানো গলায় নীতু বললেন, ‘দুধ নেই৷ মাঝে মাঝে খাবার পাচ্ছি, মাঝে মাঝে অনাহারে কাটছে৷ ডাক্তার অনেক ওষুধ দিয়েছেন৷ টাকাই নেই কেনার৷ সারাদিন দুর্বল লাগে৷ বিছানা ছেড়ে উঠতে পারি না৷ আমার বাচ্চাটাও শুকিয়ে যাচ্ছে৷’ গুরগাঁওয়ের প্রেম নগর বস্তি৷
সেখানেই নীতুর ঠিকানা৷ বস্তির লোকেরাই টাকা তুলে সদ্যোজাত সন্তানকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করছেন৷
প্রতিবেশী কাল্লো দেবীর কথায়, ‘ওদের এককাপ চা খাওয়ারও টাকা নেই৷ একেবারে নিঃস্ব৷ দিন দশেক আগে নীতু যখন আইসিইউ থেকে ছাড়া পেল কেউ একজন ১০ কিলো গম দিয়েছিল৷
কিন্তু সেই গম ভাঙিয়ে যে আটা করবে, তারও পয়সা নেই৷ আমি ওর বাচ্চাটাকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছি৷ নীতুর তো বুকের দুধও শুকিয়ে গিয়েছে৷’
নীতুর স্বামী হ্যান্ডিক্যাপড৷ অন্তত ভিক্ষা করেও কিছু টাকা নিয়ে আসতে পারতেন৷ কিন্তু ওঁর হুইলচেয়ারটিও কয়েক সপ্তাহ আগে চুরি হয়ে গিয়েছে৷ নীতুদের বস্তি থেকে ১ কিলোমিটার দূরে আরও একটি বস্তি৷
গুরগাঁও বাস টার্মিনালের কাছে৷ সেখানে আঁচল দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দিয়েছেন কয়েক সপ্তাহ আগে৷ ডাক্তার বলেছেন, এখন বিশ্রাম খুব দরকার৷ খিদের জ্বালায় তিনিও দুর্বল৷ তাই প্রসবের পরেই কিছু দূরে একটি লঙ্গরখানায় ছুটেছেন, পেট ভরাতে৷
আঁচলের স্বামী দিনমজুর৷ তাঁর মা রাগী গলায় বললেন, ‘আমাদের কথা কেন ভাবচে না সরকার? অনেক দিন পরে এখানে একটা লঙ্গর খুলল সরকার৷ তাও পুরি আর আলুরদম৷ আচ্ছা ১৫ দিনের একটি শিশু পুরি-আলুরদম খাবে? সরকার বলছে বাড়ি থেকে বেরবেন না৷ তার মানে আমরা ঘরে বসে বসে বাচ্চাগুলোকে চোখের সামনে মরতে দেখবো? আঁচলের বাবা একটু গুঁড়ো দুধ কিনবে বলে ভিক্ষে করতে গিয়েছিল৷ পুলিশ ধরল৷ মারল৷’