“এখন আর ফোন করতে পারব না, আজ থেকে ওপরে ডিউটি আছে !”- বাড়ীর উদ্দেশে শেষ ফোন ছিল শহীদ রাজেশের

“এখন আর ফোন করতে পারব না, আজ থেকে ওপরে ডিউটি আছে !”- বাড়ীর উদ্দেশে শেষ ফোন ছিল শহীদ রাজেশের

২০১৫ সালে সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে পড়তে পড়তেই ১৬ নম্বর বিহার রেজিমেন্টে সুযোগ পান রাজেশ। সেই থেকে দুই কাঁধে একসঙ্গে তুলে নিয়েছিলেন দেশরক্ষা ও সংসারের ভার।
Rajesh Orang death
চাকরি পাওয়ার পরে গ্রামের মাটির বাড়ি ভেঙে তৈরি করেছিলেন একতলা পাকা বাড়ি। বোনকে ভর্তি করেছিলেন ঝাড়খণ্ডের রানীশ্বর কলেজে। অ্যাপেনডিক্স অস্ত্রোপচারের পর থেকে বাবা কাজ করতে পারতেন না। সংসার চলত রাজেশের রোজগারেই।

বোনকে বলতেন, ‘‘তোর পড়ার জন্য যা যা দরকার হবে, সব দেব। কিন্তু ভাল ভাবে পড়াশোনা করতেই হবে।’’ বাড়ি আসতেন ছ’মাসে এক বার। শেষ বার এসেছিলেন গত সেপ্টেম্বরে, পুজোর সময়ে। সেই বাড়িতেই এসে পৌঁছবে রাজেশের কফিনবন্দি দেহ!

দু’সপ্তাহ আগে বাড়িতে ফোন করেছিলেন দাদা। ঘড়ি ধরে দু’মিনিট কথা হয়েছিল, স্পষ্ট মনে আছে বোন শকুন্তলার। দাদা বলেছিলেন, ‘‘হাতে মাত্র দু’মিনিট। মা-বাবাকে বলিস, এখন আর ফোন করতে পারব না। আজ থেকে ওপরে ডিউটি আছে। কী হবে জানি না।’’

রাজেশ ওরাংয়ের সেটাই শেষ ফোন তাঁর বাড়িতে। মঙ্গলবার বিকেল ৫টা নাগাদ বীরভূমের মহম্মদবাজার থানার বেলগড়িয়া গ্রামের ওরাং পরিবারের কাছে ফোন আসে।

লে-র সামরিক ক্যাম্প থেকে আসা সেই ফোন ‘রিসিভ’ করেন কলেজছাত্রী শকুন্তলাই। ফোনে বলা হয়, চিনা সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন রাজেশ।

বীরভূমের মহম্মদবাজার থানার বেলগড়িয়া গ্রামের বাড়িতে বসে বুধবার শকুন্তলা বলছিলেন, ‘‘দাদা বলেছিল, ওপর থেকে ফিরে আবার ফোন করব। তোরা চিন্তা করিস না। এটাই ছিল দাদার শেষ কথা।’’ বলে ভেঙে পড়লেন বোন ।